তারিখ: ২১ আগস্ট ২০২৫
প্রকাশক: মানুষের জন্য আইনি সহায়তা

সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার নারী ব্যারাকে কর্মরত এক নারী পুলিশ সদস্যকে একই থানার কনস্টেবল সাফিউর রহমান কর্তৃক ভিডিও ধারণ করে ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ছয় মাস ধরে লাগাতার ধর্ষণ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং পরে বিচার পেতে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা—এই ঘটনাকে আমরা গভীর উদ্বেগ, ঘৃণা ও তীব্র ক্ষোভের সাথে নজরে এনেছি।

মানবতা ও আইনের ভয়ঙ্কর অপমান

যেখানে একজন নারী পুলিশ সদস্য নিজ কর্মস্থলে নিরাপদ থাকার আশ্বাসে কাজ করেন, সেখানে তারই সহকর্মী কর্তৃক দিনের পর দিন ধর্ষণের শিকার হওয়া—এটা শুধু একজন নারীর অপমান নয়, বরং সমগ্র রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতার প্রতিচ্ছবি। অভিযুক্ত কনস্টেবল সাফিউর রহমান তার ঘৃণ্য কাজের ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। অথচ থানার ওসি ও অন্যান্য কর্মকর্তারা অভিযোগ পেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন—এটি অত্যন্ত নিন্দনীয়।

আইন নিজের হাতেই?

ওসি আক্তার হোসেনের এই বক্তব্য—”উর্ধ্বতনদের অনুমতি ছাড়া মামলা নেওয়া যাবে না”—একটি স্বাধীন দেশের আইনের শাসনের সঙ্গে রসিকতা করার সামিল। একজন ভুক্তভোগী নারী যখন চাকরি হারানোর ভয়ে, সামাজিক লজ্জার কারণে বারবার চুপ থেকেছেন, তখন তাকে আইনি সহায়তা না দিয়ে উল্টো আলামত ধ্বংস, অর্থের প্রলোভন, পুলিশ লাইনে বদলি করা ইত্যাদি কৌশলে বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

আমাদের দাবি

মানুষের জন্য আইনি সহায়তা ফাউন্ডেশন এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে নিম্নলিখিত দাবিগুলো উত্থাপন করছে:

  1. অভিযুক্ত কনস্টেবল সাফিউর রহমানকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রুজু করতে হবে।
  2. থানা ও জেলা পুলিশের যেসব কর্মকর্তা বিষয়টি ধামাচাপা দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ও ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  3. ভুক্তভোগী নারী পুলিশ সদস্যকে চাকরি ও নিরাপত্তার পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে এবং তার চিকিৎসা ও আইনি সহায়তা রাষ্ট্রীয়ভাবে নিশ্চিত করতে হবে।
  4. পুলিশ ব্যারাক ও প্রশাসনিক ভবনে যৌন সহিংসতা রোধে স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন ও নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
  5. নারী পুলিশ সদস্যদের জন্য বিশেষ অভিযোগ গ্রহণ ব্যবস্থা ও গোপনীয় সুরক্ষা প্রক্রিয়া চালু করতে হবে, যেন তারা নির্ভয়ে বিচার চাইতে পারেন।

একজন নারী যদি নিজের ইউনিফর্ম গায়ে দিয়েও নিরাপদ না থাকেন, তবে রাষ্ট্র, সমাজ ও আইন শাসন সকলেরই ব্যর্থতা প্রমাণিত হয়। আমরা এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ, স্বচ্ছ ও দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি এবং সকল মানবাধিকার সংগঠন, গণমাধ্যম ও সচেতন নাগরিকদের এই ভয়ঙ্কর ঘটনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

— মানুষের জন্য আইনি সহায়তা ফাউন্ডেশন